কম্পিউটারের প্রকারভেদ
অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer) :
- অ্যানালগ কম্পিউটারে বর্ণ এবং সংখ্যার বদলে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল সংকেত বা অ্যানালগ সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়।
- বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে অ্যানালগ কম্পিউটারের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- অ্যানালগ কম্পিউটারের ডাটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার নামক বিশেষ বর্তনী ব্যবহৃত হয়।
- এ ধরনের বর্তনী সাধারণ যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ছাড়াও লগারিদম, অন্তরকলন (Differentiation), সমাকলন (Integration) ইত্যাদি কাজ সরাসরি করতে পারে।
- অ্যানালগ কম্পিউটার সময়ের বা অ্যানালগ বৈদ্যুতিক সংকেতের উপর নির্ভর করে নির্মিত কম্পিউটার।
- উড়োজাহাজ, মোটরগাড়ি, মহাকাশযান ইত্যাদির গতিবেগ; বায়ু, তরল ও কঠিন পদার্থের চাপ এবং বিশেষ কোনো স্থানের বা কক্ষের তাপমাত্রা পরিমাপণের জন্য অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)):
- ডিজিটাল কম্পিউটারে ডিজিটাল সংকেত বা বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু বা বন্ধ করে হিসাব কার্য করা হয়ে থাকে।
- বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু হলে '১' এবং বন্ধ হলে '০' এ প্রক্রিয়ায় কার্যসম্পন্ন হয়ে থাকে।
- এ দুটি সংখ্যার সাহায্যে বর্ণ, সংখ্যা, লেখা, ছবি নির্মাণ, স্থাপত্য, নির্মাণ কাজের নক্সা সবকিছুই করা হয় অর্থাৎ যাবতীয় গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজসমূহ বাইনারি ডিজিট অর্থাৎ '০' এবং '১' এর ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হয়।
- প্রচলিত অর্থে কম্পিউটার বলতে ডিজিটাল কম্পিউটারকেই বুঝায়। বর্তমানে ব্যবহৃত বেশিরভাগ কম্পিউটারই ডিজিটাল কম্পিউটার।
হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer) :
- যে কম্পিউটার অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় কম্পিউটারের নীতির সমন¦য়ে গঠিত তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে।
- এই কম্পিউটারে সাধারণত উপাত্ত সংগৃহীত হয় অ্যানালগ প্রক্রিয়ায় এবং সংগৃহীত উপাত্ত সংখ্যায় রূপান্তরিত করে ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করা হয়।
- যেমন—হাসপাতালে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটারের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। রোগীর রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া, শরীরের তাপ ইত্যাদির উপাত্ত অ্যানালগ অংশের সাহায্যে গ্রহণ করার পর উপাত্তগুলো ডিজিটাল কম্পিউটারে ব্যবহারযোগ্য সংখ্যা সংকেতে রূপান্তরিত হয়ে ডিজিটাল অংশে স্থানান্তরিত হয়। ডিজিটাল অংশ উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করে রোগীর বর্তমান অবস্থা ফলাফল বা আউটপুট আকারে তুলে ধরে।
কাজের দক্ষতা এবং আকারের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটার ৪ প্রকার।
সুপার কম্পিউটার :
- সুপার কম্পিউটার হলো সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কম্পিউটার।
- এক একটি সুপার কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে অন্তত এক ট্রিলিয়ন (১০১২) হিসাব করতে পারে।
- যেখানে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ব্যাপক জটিল হিসাব করতে হয় সেখানে এদের প্রয়োজন হয়। যেমন—মহাকাশযান চালনা, প্রতিরক্ষা গবেষণা, পারমাণবিক চুল্লি ও সুপারসনিক বিমানের ডানার ডিজাইন তৈরি, সিমুলেশন ও মডেলিং করতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
- উদাহরণ : CRAY 1, CYBER 205, SUPER SXII.
- বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার হলো- জাপানের ফুগাকু (Fugaku) এবং ২য় যুক্তরাষ্ট্রের সামিট (Summit)।
- ভারতের তৈরিকৃত সুপার কম্পিউটার হলো পরম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান Bangladesh Computer council (BCC)--এর ল্যাবে একটি সুপার কম্পিউটার আছে যা IBM RS/6000 SP মডেলের।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার :
- মেইনফ্রেম কম্পিউটারে সব ধরনের পেরিফেরাল ব্যবস্থা, সব রকম হাই লেভেল ভাষা ও সব ধরনের সফট্ওয়্যার ব্যবহার করা যায়।
- এগুলো I/O ব্যবস্থায় প্রতি সেকেন্ডে কয়েক লক্ষ বাইট ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে।
- উচ্চস্তরের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
- মেইনফ্রেম কম্পিউটারে একসঙ্গে শতাধিক ব্যবহারকারী টাইম শেয়ারিং পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারে।
- এদের ডেটা সঞ্চয় ক্ষমতা খুব বেশি।
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার পরিচালনা করতে বিশেষজ্ঞ অপারেটর প্রয়োজন হয়।
- উদাহরণ : IBM 4143, UNIVAC 1100, NCRN 8370, IBM-1620
মিনি কম্পিউটার :
- মিনি কম্পিউটারে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের জন্য সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট বর্তনী ব্যবহার করা হয়।
- মাইক্রোকম্পিউটারের তুলনায় মিনি কম্পিউটার অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন এবং এই জন্য মিনি কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের জটিল কাজে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে একাধিক ইনপুট/আউটপুট যন্ত্র ব্যবহৃত হয়।
- টার্মিনালের সাহায্যে প্রায় শতাধিক ব্যবহারকারী একসঙ্গে মিনিকম্পিউটারে কাজ করতে পারে।
- মিনি কম্পিউটারকে বলা হয় মধ্যম সারির (Mid-range) কম্পিউটার।
- প্রথম মিনি কম্পিউটার- পিডিপি-১। ট্রানজিস্টারভিত্তিক প্রথম মিনি কম্পিউটার- পিডিপি-৮।
মাইক্রো কম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার :
- বিশ্ববিখ্যাত আই.বি.এম. কোম্পানি ১৯৮১ সালে একক ব্যবহারকারীর উপযোগী মাইক্রো কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি বলেই একে মাইক্রো কম্পিউটার বলা হয়।
- এ ধরনের কম্পিউটার সাধারণত একটি মাইক্রো প্রসেসর, সিপিইউ, রম, র্যাম ও I/O ইন্টারফেস চিপ দ্বারা গঠিত।
- মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা সংক্ষেপে পিসি (PC- Personal Computer) বলা হয়। মাইক্রো কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে— ডেস্কটপ , ল্যাপটপ , নোটবুক, পামটপ, পিডিএ ওয়ার্কস্টেশন ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য দুটি মাইক্রো কম্পিউটার হলো IBM PC, APPLE POWER PC.
মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
মাইক্রো কম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার :
- ডেস্কটপ : ডেস্ক বা টেবিলে স্থাপন করা হয়। ব্যবহারের সময় বিদ্যুৎ Supply থাকতে হয়। কোনো ব্যাটারি থাকে না। এটি সহজে বহনযোগ্য নয়। অফিস আদালতে এই ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
- ল্যাপটপ বা নোট বুক : ল্যাপ অর্থাৎ কোলের উপর স্থাপন করে কাজ করা যায়, এমন ছোট আকারের কম্পিউটারকে ল্যাপটপ বলা হয়। ল্যাপটপ কম্পিউটার নোট বুক বা পাওয়ার বুক ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ১৯৮১ সালে এপসন কোম্পানি প্রথম ল্যাপটপ কম্পিউটার প্রবর্তন করে। বাংলাদেশে তৈরি প্রথম ল্যাপটপ ‘দোয়েল'।
- নেটবুক : নেটবুক হচ্ছে পূর্ণ আকারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট কী-বোর্ড এবং ফ্লিপ-আপ মনিটর সম্বলিত এক প্রকার মোবাইল কম্পিউটার। এরা আকারে ল্যাপটপের চেয়ে ছোট কিন্তু পামটপের চেয়ে বড়।
- ট্যাবলেট পিসি বা ট্যাব : ট্যাবলেট পিসি লেটার সাইজের স্লেটের অনুরূপ এক ধরনের কম্পিউটার যার স্ক্রীনে হাতের আঙ্গুল স্পর্শ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ বা ডেটা প্রদান করা অথবা ডিজিটাল কলম দিয়ে লেখা বা ড্রয়িং করা যায়।
- পামটপ বা পামপিসি বা হেন্ডহেল্ড : পাম অর্থাৎ হাতের তালুর মধ্যে রেখে কাজ করা যায়, এমন সাইজের কম্পিউটারকে পামটপ কম্পিউটার বা পামপিসি বলা হয়। একে পকেট পিসি বা পিডিএ (PDA = Perosnal Digital Assistance) ও বলা হয়। এতে আউটপুট দেখার জন্য ছোট এলসিডি মনিটর থাকে। টাচ স্ক্রিনে ব্যবহারের জন্য মাউসের পরিবর্তে বিশেষ কলম বা টাচ পেন ব্যবহার করা হয়।