কম্পিউটার এর ইতিহাস
প্রাচীন গণনাযন্ত্র
অ্যাবাকাস
:

- পৃথিবীর প্রথম গণনাযন্ত্রের নাম হলো অ্যাবাকাস।
- খৃষ্টপূর্ব ২,৭00 অব্দে মেসোপটেমিয়ায় উদ্ভাবিত হয়
- গ্রীক, রোমান, চীনা, জাপানি এবং অন্যান্য সংস্কৃতি দ্বারা গৃহীত এবং পরিবর্তিত হয়েছিল।
- অ্যাবাকাস গ্রিক, রোমান ও মিশরীয়রা ব্যবহার করলেও তাদের পদ্ধতিতে শূন্য সূচনা করার কোনো পদ্ধতি ছিল না। সর্বপ্রথম শূন্যকে একটি চিহ্ন প্রদান করে হিসাব পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করেন/ আবিষ্কার করেন ভারতীয় গনিতবিদ আর্যভট্ট।
- খ্রিষ্টপূর্ব (৫০০-৪৫০) সালে চীন এবং মিশরে এটি ব্যবহার করা হতো।
- উডেন ফ্রেম এবং গোলাকার গুটি দ্বারা তৈরি করা হয় এবং ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে এ যন্ত্রে গণনা করা হতো।
- এতে ১৩ টি রড কানেক্টেড থাকে
- চাইনিজ এবাকাসে উপরের রডে ০২ টি এবং নিচের রডে ০৫ টি গুটি সেট করা থাকে
- এর সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতি কাজ করা যেতো।
- মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- চীনে অ্যাবাকাসকে বলা হয় সুয়ানপান
- রাশিয়ায় বলা হয় স্কশিয়া
- জাপানে বলা হয় সরোবান
- কোরিয়ায় বলা হয় যুপান
নেপিয়ারের
হাড় :
- ১৬১৪ সালে স্কটিশ গণিতবিদ জন নেপিয়ার গুণ ও ভাগ কাজে সহায়তার জন্য কাঠি দিয়ে এক ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এতে দাগ কাটা ও সংখ্যা বসানোর জন্য কাঠি ব্যবহার করা হয়।
- এ যন্ত্র নেপিয়ারের হাড় নামে পরিচিত। নেপিয়ারের যন্ত্রে ১০টি দন্ড কাঠি রয়েছে। প্রত্যেকটি দন্ডে ১০টি সংখ্যা রয়েছে।
- এর সাহায্যে গুণ, ভাগ, বর্গ, বর্গমূল, ঘনমূল, সমাধান সহজে করা যায়। লগারিদমভিত্তিক হিসেব কার্যের জন্যনেপিয়ার যে সংখ্যা চিহ্নিত দন্ডগুলো ব্যবহার করেছিলেন সেগুলোই নেপিয়ারের দন্ড লগারিদমের প্রবর্তন করেন জন নেপিয়ার।
প্যাস্কালেন
:
- ১৬৪২ সালে ব্লেইজ প্যাস্কেল (Blaise Pascal) নামের এক ফরাসি যুবক এই যান্ত্রিক গণনা যন্ত্রটি তৈরি করেন।
- পরবর্তীতে তাঁর সম্মানে কম্পিউটারের একটি আধুনিক প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা (Programming Language)-এর নাম দেওয়া হয়েছে প্যাস্কাল (Pascal)।
ইলেকট্রো মেকানিক্যাল যুগ
সেন্সাস
মেশিন
- ড. হারম্যান হলেরিথ ১৮৮৭ সালে মেশিনের সাহায্যে পাঠযোগ্য Concept-এর ভিত্তিতে ‘সেন্সাস মেশিন' নামে একটি যন্ত্রের নক্সা প্রণয়ন করেন।
- ড. হলেরিথ ১৮৯৬ সালে তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বিক্রয়ের জন্য কোম্পানি গঠন করেন।
মার্ক-১
:প্রথম বৈদ্যুতিক কম্পিউটার (আবিষ্কারক-হাওয়ার্ড আইকেন)
- প্রথম বৈদ্যুতিক কম্পিউটার হলো মার্ক-১।
- ১৯৩০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিতের অধ্যাপক হাওয়ার্ড আইকেন স্বয়ংক্রিয় গণনাযন্ত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আইবিএম কোম্পানির প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ১৯৪৪ সালের মধ্যে তাঁর যন্ত্রটি তৈরি করতে সক্ষম হন। যন্ত্রটি মার্ক-১ ইলেকট্রনিক কম্পিউটার নামে প্রচলিত হয়।
- এ কম্পিউটারে কোন ভ্যাকুয়াম ভালব ব্যবহৃত হয়নি।গঠন প্রকৃতির দিক থেকে মার্ক-১ ছিল ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটার। বৈশিষ্ট্যগতভাবে এর অনেক কিছুই চার্লস ব্যাবেজের পরিকল্পিত যন্ত্রের সঙ্গে মিল ছিল।
ইলেকট্রনিক যুগ
ABC
Computer (ABC- Atanasoff-Berry
Computer)
- ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের চিন্তা প্রথম শুরু করেন পদার্থবিদ্যা ও গণিতের অধ্যাপক ড. জন ভিনসেন্ট অ্যাটানাসফ।
- ১৯৩৭-৩৮ সালের মধ্যে ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করেন। যন্ত্রটির নাম রাখা হয় Atanasoff-Berry Computer, সংক্ষেপে এবিসি (ABC)।
- এবিসি কম্পিউটারেই প্রথম মজুদ (Storage) এবং গাণিতিক/ যুক্তিমূলক কাজের জন্য ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করা হয়।
ENIAC
(প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রনিক
কম্পিউটার)
- পেনসেলভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যুর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জন মুসলি (John W. Mauchly) এবং তার ছাত্র প্রেসপার একার্ট ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ৮ বছর নিরলস পরিশ্রম করে এনিয়াক (Electronic Numerical Integrator and Calculator–ENIAC) নামে একটি কম্পিউটার তৈরি করেন।
- এটি পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার।এটি ছিল উদ্ভাবন সময়কার যেকোনো যন্ত্রের চেয়ে তিনশতগুণ দ্রুত কাজ করতে সক্ষম যন্ত্র। এটি দশমিক পদ্ধতিতে কাজ করতো। তখন এনিয়াক কম্পিউটারে কোনো স্মৃতি ব্যবস্থা ছিল না। এটিকে ব্যবহারের জন্য প্লাগ ও সুইচ ব্যবহার করতে হতো।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে নতুন প্রযুক্তির সংযোজনের জন্যই মূলত এনিয়াক কম্পিউটারের সৃষ্টি।
EDVAC / জন ভন নিউম্যান : (আধুনিক কম্পিউটারের জনক)
- হাঙ্গেরীর বিখ্যাত গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান (John Von Neumann) ১৯৪০ এর দশকের মধ্যভাগে বলেন—“বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে স্মৃতি ব্যবস্থা সম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি সম্ভব। কম্পিউটার যন্ত্রের অভ্যন্তরে ডেটা ও নির্বাহ সংকেত মজুদ করা যেতে পারে।”
- এ ধারণার উপর ভিত্তি করে ১৯৪৬ সালের মধ্যে ম্যুর স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিজ্ঞানীরা এডভ্যাক (EDVAC-Electronic Descrete Variable Automatic Computer) কম্পিউটার তৈরি করেন।
- এটি সংরক্ষিত প্রোগ্রাম বিশিষ্ট ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। মূল সূত্র আবিষ্কারের জন্য ভন নিউম্যানকে আধুনিক কম্পিউটারের জনকের মর্যাদা দেয়া হয়।
EDSAC
- কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক গবেষণার অধ্যাপক মার্কস উইলকিস এর নেতৃত্বাধীন একদল বিজ্ঞানী এ্যাডস্যাক (EDSAC—Electronic Delay Storage Automatic Calculator) আবিষ্কার করেন।
- EDSAC কম্পিউটারেই প্রথম সংরক্ষিত প্রোগ্রাম নির্বাহের ধারণার বাস্তব রূপ দেওয়া দেওয়া হয়।
- EDSAC কম্পিউটারে ডাটা সংরক্ষণের জন্য Mercury Delay lines মেমোরি ব্যবহার হয়।
UNIVAC-1
- জন মুসলি এবং প্রেসপার একার্ট ১৯৫১ সালে প্রথম ইউনিভ্যাক (UNIVAC— Universal Automatic Computer) সিস্টেম তৈরি করেন।
- ইউনিভ্যাকই ছিল প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার। এটি ছিল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি প্রথম কম্পিউটার এই কম্পিউটারের বড় সমস্যা ছিল এতে ব্যবহৃত টিউবগুলোর ফিলামেন্ট কেটে যেত বলে এগুলো বেশি দিন চলত না। টিউবগুলোর জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুতের দরকার হত।
- এত সমস্যার পরও এই কম্পিউটারগুলো বিভিন্ন কাজে, নির্বাচন পূর্বাভাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে তখন সফলভাবে ব্যবহৃত হত।
ট্রানজিস্টর
- ১৯৪৮ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে ট্রানজিস্টর আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কারক হলেন - জন বারডিন, উইলিয়াম শকলে এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন।এ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে কম্পিউটারের উন্নয়ন ও বিবর্তনের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
- ট্রানজিস্টার আবিষ্কারের সময়কাল থেকে ইলেকট্রনিক্সের যাত্রা শুরু হয়।এতে অর্ধপরিবাহী হিসেবে সিলিকন বা জার্মেনিয়াম ব্যবহৃত হয়।এটি অ্যামপ্লিফায়ার বা বিবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ট্রানজিস্টর আকারে অনেক ছোট বলে এ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলো আকারে অনেক ছোট, গরম কম হয়, কর্মদক্ষতা অনেক বেশি, অধিক নির্ভরযোগ্য ও দ্রুতগতিসম্পন্ন।
- ট্রানজিস্টরভিত্তিক প্রথম কম্পিউটার TX-O, প্রথম মিনি কম্পিউটার পিডিপি-৮। এ সময়ের জনপ্রিয় কম্পিউটারগুলোর মধ্যে IBM-1401, RCA-501, NCR-300 ইত্যাদি অন্যতম।
আইসি বা
ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC)
- অনেকগুলো ট্রানজিস্টর ও অন্যান্য উপকরণের সমন¦য়ে তৈরি একীভূত বর্তনী বা আইসি ব্যবহারের মাধ্যমে কম্পিউটারের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা হয়।
- আইসি আবিষ্কার করেন জ্যাক কেলবি ১৯৫৮ সালে। আধুনিক কম্পিউটারের দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছেআইসি।
- আইসি একটি বর্তনী যা ছোট এক টুকরা সিলিকনের টুকরার উপর তৈরি অতি ক্ষুদ্র বর্তনী। আইসি চিপে খুব সহজেই কয়েক হাজার ট্রানজিস্টর ধরানো যায়। ফলে এ প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর আকার আরো ছোট হতে থাকে, দাম কমে যায়, বিদ্যুৎ খরচ কমে যায়।ফলে কাজ করার ক্ষমতা, কাজের গতি ও নির্ভরশীলতা বহুগুণে বেড়ে যায়।
- ১৯৬৮ সালে বারোস কোম্পানি আইসি ভিত্তিক প্রথম কম্পিউটার তৈরি করে B2500 ও B3500 ।
- এ সময়ের উল্লেখযোগ্য কম্পিউটারগুলো হলো : আইবিএম ৩৬০, আইবিএম-৩৭০, অচউএঊ-৬০০ ইত্যাদি।আইসি দিয়ে তৈরি প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার আইবিএম ৩৬০।