কম্পিউটার

কম্পিউটার হলোএমন একটি যন্ত্র যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসরণ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত কাজ খুব দ্রুত করতে পারে।
কম্পিউটার (computer) শব্দটি গ্রিক কম্পিউট (compute) শব্দ থেকে এসেছে। compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা
করা। আর কম্পিউটার (computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না।
কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। ব্যবহারিকভাবে বলা যায়, কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যাতে ডেটা বা নির্দেশ ইনপুট নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে, ইনপুট হিসাবে প্রাপ্ত ডেটাকে প্রসেস করার ব্যবস্থা থাকে এবং প্রসেস করার পর প্রাপ্ত ফলাফল প্রদর্শিত হয়।
কম্পিউটার যা কিছু করে তার পুরোটাই একটা সিস্টেমের (সফটওয়্যার) মধ্য দিয়ে চলে। কম্পিউটার মানুষের মত হঠাৎ করে বা ধীরে সুস্থে বুদ্ধি বিবেচনা করে কিছু করতে পারে না। কারণ এর কোনো বুদ্ধি বিবেচনা নেই।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
কম্পিউটারের দ্রুতগতি, বিশ্বাসযোগ্যতা, সূক্ষতা, ক্লান্তিহীনতা, মেমোরি, যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত, বহমুখিতা, স্বয়ংক্রিয়তা ইত্যাদি হলো কম্পিউটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- বিশ্বাসযোগ্যতা : কম্পিউটার এত দ্রতগতিতে কাজ করলেও তার কাজ নির্ভুল। উন্নত প্রযুক্তির কারণে কম্পিউটারে সব সময় নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম দিয়ে নির্দিষ্ট কাজ পুরোপুরি নির্ভুলভাবে করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে প্রোগ্রাম ও ডেটা অবশ্যই ১০০% শুদ্ধ হতে হবে।
- স্মৃতি বা মেমোরি : কম্পিউটারে স্মৃতি অতি বিশাল, বিপুল পরিমাণ ডেটা ও নির্দেশ তাতে জমা রাখা যায়।
- সূক্ষতা : কম্পিউটার প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল সূক্ষভাবে দিতে পারে যা মানুষের পক্ষে প্রায়ই অসম্ভব।
- ক্লান্তিহীনতা : দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ করলেও কম্পিউটার ক্লান্ত হয় না বা গণনায় ভুল করে না। কিন্তু মানুষের ক্লান্তি আছে, অবসাদ আছে, একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে মানুষ ক্লান্তি বোধ করে।
- যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত : কম্পিউটার যে শুধু বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারে তা নয়, সেই সাথে লজিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে পারে এবং বিভিন্ন ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কম্পিউটার অনেক জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে সক্ষম হচ্ছে।
- বহুমুখিতা : কম্পিউটার এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যার সাহায্যে যে কোনো ধরনের কাজ সম্পন্ন করা যায়। সাধারণ হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান পর্যন্ত সর্বত্রই এই কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে।
- অসীম জীবনসীমা : কম্পিউটার পরিচালিত হয় সফটওয়্যারের সাহায্যে। মানুষের জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকলেও সফটওয়্যারের সাধারণত নির্দিষ্ট জীবনসীমা নেই।
- স্বয়ংক্রিয়তা : কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে।
কম্পিউটারের পারঙ্গমতা
একটি কম্পিউটার কত দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে তার মাপকাঠিকে কম্পিউটারের পারঙ্গমতা (Performance) বলে।কম্পিউটার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করে। কম্পিউটারে দ্রুত গতিসম্পন্ন গণনার কাজকে মিলিসেকেন্ড, মাইক্রোসেকেন্ড, ন্যানোসেকেন্ড, পিকোসেকেন্ড ইত্যাদি সময়ের একক হিসেবে কাজ করা হয়। তবে কম্পিউটারের কাজের গতি প্রকাশ করা হয় ন্যানোসেকেন্ড দ্বারা। কম্পিউটারের একটি কাজ সম্পূর্ণ করতে ১ ন্যানো সেকেন্ড সময় লাগে। নিম্নে সেকেন্ডের সাথে বিভিন্ন সময়ের এককের সাথে সম্পর্ক দেখানো হলো :
- ১ মিলি সেকেন্ড = ১০-৩ সেকেন্ড = ১/১০০০ সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের ১ হাজার ভাগের এক ভাগ।
- ১ মাইক্রো সেকেন্ড = ১০-৬ সেকেন্ড = ১/১০০০০০০ সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ।
- ১ ন্যানো সেকেন্ড = ১০-৯ সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০ সেকেন্ডে = ১ সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের এক ভাগ
- ১ পিকো সেকেন্ড = ১০-১২ সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০০০০ সেকেন্ড = ১ সেকেন্ডের ১ লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ।
- ১ ফেমটো সেকেন্ড = ১০-১৫ সেকেন্ড = ১/১০০০০০০০০০০০০০০০ সেকেন্ড।
কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা
কম্পিউটারের অনেক গুণাবলির মধ্যেও কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। কম্পিউটারের প্রধান প্রধান কিছু সীমাবদ্ধতা নিম্নে দেওয়া হলো:
- কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো চিন্তাশক্তি নেই। এজন্য কম্পিউটার নিজের থেকে কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে না।
- কম্পিউটার তার স্মৃতিতে সংরক্ষিত প্রোগ্রাম দ্বারা পরিচালিত হয় কিন্তু মানুষতার নিজস্ব চিন্তাশক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়।
- কম্পিউটার মানুষের নির্দেশ দ্বারা চালিত হয়। কম্পিউটার নিজের থেকে চলতে পারে না।
- কম্পিউটারের কাজের গতির সীমাদ্ধতা রয়েছে। কম্পিউটারের কাজের গতি বাড়ানোর জন্য গবেষণা চলছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি
- কম্পিউটার একটি- হিসাবকারী যন্ত্র
- আধুনিক কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - বৃহৎ স্মৃতির আধার, দ্রুত গতিতে কার্য সমাধান, ভ্রমশূন্য ফলাফল।
- কম্পিউটারের বুদ্ধি-বিবেচনা নেই। কম্পিটারের IQ শূন্য (0)।
- কম্পিউটার বেশি সুবিধাজনক - পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ
- কম্পিউটারে কাজের গতি দ্বারা প্রকাশ করা হয় - ন্যানোসেকেন্ড দ্বারা।
- ন্যানো সেকেন্ড হলো - এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের এক ভাগ
- একটি যোগ করতে কম্পিউটারের ৫০ ন্যানো সেকেন্ড সময় লাগলে সেকেন্ডে এটা যোগ করতে পারবে - ২ কোটি